Thursday, January 19, 2017

বাড়িভাড়া সমস্যা সমাধানে আইনগত অধিকার



বাড়িভাড়া সমস্যা সমাধানেপনার আইনগত অধিকার জেনে নিন

বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের অবগতির জন্য এবং সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন১৯৯১ এর প্রয়োজনীয় অংশসমুহ নিচে উল্লেখ করা হলঃ

অগ্রিম ভাড়াঃ
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ১০ ২৩ ধারা-
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ি মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়ি ভাড়ার অধিক কোনো প্রকার ভাড়া, জামানত, প্রিমিয়াম বা সেলামি গ্রহণ করতে পারবেন না।
এরুপ করলে তিনি দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর  ২৩ ধারা মোতাবেক দণ্ডিত হবেন

ভাড়ার রসিদঃ
আপনার পরিশোধকৃত বাড়ি ভাড়ার রসিদ সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক বা তার প্রতিনিধি দিতে বাধ্য

ভাড়া বাড়ানোঃ
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬ ধারা-
মানসম্মত ভাড়া কার্যকরী হবার তারিখ হতে দুই বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুই বছর পর মানসম্মত ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে।

বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা এবং ধারা-
মানসম্মত ভাড়া অপেক্ষা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অধিক বাড়ি ভাড়া আদায় করলে সে ক্ষেত্রে প্রথমবারের অপরাধের জন্য মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী প্রত্যেক অপরাধের জন্য এক মাসের অতিরিক্ত যে ভাড়া গ্রহণ করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন

মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণঃ
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫ () ধারা-
ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়ির বাজার মূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪ তে স্পষ্ট করা আছে

বাস উপযোগী বাসস্থানঃ
বাড়ি মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য। বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন না। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে বাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বাড়ির মালিকের উপর এই বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১নং ধারায় বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অর্থাৎ ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনবোধে লিফটের সুবিধাও দিতে হবে। কিন্তু উক্তরূপ সুবিধা প্রদানে বাড়ি মালিক অনীহা প্রকাশ করলে কিংবা বাড়িটি মেরামতের প্রয়োজন হলেও ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করতে পারবেন

ভাড়া বাসা থেকে উচ্ছেদঃ
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৮ নং ধারা-
 ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বা ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের বিধানে যাই থাকুক না কেন, ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৮(২) ধারা-
বাড়ির মালিক পরিবর্তিত হলেও ভাড়াটিয়া যদি আইনসম্মত ভাড়া প্রদানে রাজি থাকেন তবে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। চুক্তিপত্র না থাকলে যদি কোনো ভাড়াটে প্রতি মাসের ভাড়া পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করেন, তাহলেও ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। যুক্তিসংগত কারণে ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে যদি মাসিক ভাড়ায় কেউ থাকে, সে ক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। চুক্তি যদি বার্ষিক ইজারা হয় বা শিল্পকারখানা হয়, তবে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হবে

ভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র ক্রয়ঃ
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১২ ধারা
কোনো বাড়ি ভাড়ার জন্য বা তার নবায়ন বা মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কোনো ব্যক্তি তার আসবাবপত্র ক্রয়ের কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবেন না। অর্থাৎ কোনো বাড়ির মালিক তার বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র ক্রয় করতে পারবেন না। তদুপরি ভাড়া নবায়ন কিংবা মেয়াদ বৃদ্ধির শর্ত যদি বাড়ি ভাড়া চুক্তিতে থেকেও থাকে তা সত্ত্বেও ভাড়াটিয়া বাড়ি ভাড়া নবায়ন না করে, তাহলেও বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র আটক বা ক্রয় করতে পারবেন না

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনের প্রয়োগ হবে না ভেবে বেশিরভাগ মানুষ এরকম হয়রানিগুলো মেনে নেন। তবে এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মতামত হলো, প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ সবাই সচেতন হলে ধরণের সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব

No comments:

Post a Comment

Specific Relief Act 1877 in Bangla

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ Specific Relief Act 1877 সুনির্দিষ্ট প্রতিকার: বাদী আরজিতে যে প্রতিকার প্রার্থনা আদালত যদি তাকে সেই প...